বাংলাদেশে কোন ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণ দান করে? জানুন

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম গ্রামীণ ব্যাংক বিনা জামানতে লোন দিয়ে থাকে। গ্রামীণ ব্যাংক মূলত দরিদ্র মানুষের জন্য ক্ষুদ্র লোন প্রদান করে থাকে, যা সাধারণত জামানতবিহীন হয়ে থাকে। এছাড়াও, কর্মসংস্থান ব্যাংক বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য লোন দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশে কোন ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণ দান করে
বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিনা জামানতেলোন প্রদান করে থাকে, তবে এই ধরনের লোন সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত এবং কঠোর শর্তসাপেক্ষে দেওয়া হয়। আমাদের দেশে বেশ কিছু মাইক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ গুলোর মাঝে, গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক অন্যতম।

যারা জামানত ছাড়াই লোন নিতে চাচ্ছেন, তারা এসব ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন। লোন নেয়ার জন্য এসব মাইক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে হয়। তারপর, তাদের দেয়া ফরম পূরণ করে সাথে ছবি এবং বেশ কিছু তথ্য দিয়ে জামানত বিহীন লোন নেয়া যায়।

আজকের এই আর্টিকেলে আজ আমরা আপনাকে মনের দ্বিধা দূর করবো ও আপনার মনের “বাংলাদেশে কোন ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণ দান করে “ প্রশ্নের সঠিক উওর জানাবো তাহলে আলোচনাটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে জেনে নেওয়া যাক।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ

বিনা জামানতে লোন কি?

বিনা জামানতে লোন হলো এমন এক ধরনের লোন যা নেওয়ার জন্য কোনো সম্পত্তির জামানত বা বন্ধক রাখার প্রয়োজন হয় না। সাধারণত, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই ধরনের লোন দিয়ে থাকে, তবে লোন অনুমোদনের জন্য লোনগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর, আয় এবং পরিশোধের ক্ষমতার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে।

বিনা জামানতে লোন সাধারণত ব্যক্তিগত লোন, ক্রেডিট কার্ড, বা স্টুডেন্ট লোন এর মতো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আরও সহজভাবে বললে, যখন কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আপনাকে কোনো সম্পত্তি বন্ধক না রেখেই লোন দেয়, তখন তাকে বিনা জামানতে লোন বলা হয়।
এই ধরনের লোনের কিছু বৈশিষ্ট্য হলোঃ
  • লোন নেওয়ার জন্য কোনো সম্পত্তির জামানত দিতে হয় না।
  • লোন অনুমোদনের জন্য সাধারণত লোনগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর, আয় এবং পরিশোধের ক্ষমতা বিবেচনা করা হয়।
  • এই ধরনের লোনের সুদের হার বেশি হতে পারে, কারণ এখানে কোনো জামানত না থাকার কারণে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।
  • বিনা জামানতে লোন সাধারণত ছোট অংকের জন্য প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশে কোন ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণ দান করে

বাংলাদেশে সর্ব প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংক একটি মাইক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিনা জামানতে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য লোন প্রদান করা শুরু করে। এই লোন সাধারণত কোন ধরনের জামানত ছাড়াই লোন দেওয়া হয় এবং গ্রাহকদের সমবায় ভিত্তিতে লোন পাওয়ার সুযোগ প্রদান করে। তবে বর্তমান সময়ে অনেক ব্যাংক ও মাইক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠান আছে যারা বিনা জামানতে লোন প্রদান করছে। আমরা এখন বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত তথ্য জেনে নিব।

১। গ্রামীণ ব্যাংক

দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ব্যবসা করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোন নিয়ে থাকে। গ্রামীণ ব্যাংক সকল মানুষকে লোন প্রদান করে থাকে । গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন দান পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্তাবলী পূরণ করতে হয়। এ সকল শর্তাবলী পূরণ করে লোনের জন্য আবেদন করতে হবে।

গ্রামীণ ব্যাংক তার উদ্ভাবনী ক্ষুদ্রলোন মডেলের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তাদের কার্যক্রমের মূল ভিত্তিই হলো দরিদ্র ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর জন্য বিনা জামানতে লোন প্রদান করে তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা।

লোনের ধরন: গ্রামীণ ব্যাংক মূলত ক্ষুদ্রলোন প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে বেসিক লোন, ক্ষুদ্র উদ্যোগ লোন, গৃহ নির্মাণ লোন, শিক্ষা লোনএবং জীবন-সংগ্রামী সদস্য লোন (ভিক্ষুকদের জন্য)।

লোনের পরিমাণ:
  • বেসিক লোন: নতুন সদস্যরা সাধারণত ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন লোন পেয়ে থাকেন। পরবর্তীতে নিয়মিত পরিশোধের মাধ্যমে এই সীমা বাড়তে পারে।
  • ক্ষুদ্র উদ্যোগ লোন: সফলভাবে বেসিক লোন পরিশোধকারী সদস্যরা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন পেতে পারেন।
  • গৃহ নির্মাণ লোন: টিনের ছাদের বাড়ি তৈরির জন্য ৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যেতে পারে।

২। কর্মসংস্থান ব্যাংক

কর্মসংস্থান ব্যাংক একটি বিশেষায়িত সরকারি ব্যাংক যা দেশের বেকার ও অর্ধ-বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে।
  • লোনের ধরন: তারা মূলত আত্মকর্মসংস্থানমূলক লোন এবং ক্ষুদ্র লোন প্রদান করে থাকে, যার একটি বড় অংশ জামানতবিহীন।
  • পরিমাণ: বেকার যুবক ও যুব নারীরা ২০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানত ছাড়াই লোন পেতে পারেন।

৩। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

এটি প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে গঠিত একটি বিশেষায়িত সরকারি ব্যাংক। তারা প্রবাসীদের এবং বিদেশ ফেরতদের জন্য বিনা জামানতে লোন সুবিধা দিয়ে থাকে।

লোনের ধরন:
  • অভিবাসন লোন: বিদেশগামী কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার খরচ মেটানোর জন্য।
  • পুনর্বাসন লোন: বিদেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের আত্মকর্মসংস্থান বা ছোট ব্যবসা শুরুর জন্য।
পরিমাণ:
  • অভিবাসন লোন: বিদেশগামী কর্মীদের জন্য সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন অভিবাসন লোন দেওয়া হয়। সুদের হার সাধারণত ৯% সরল সুদ।
  • পুনর্বাসন লোন: বিদেশ ফেরত কর্মীদের আত্মকর্মসংস্থান বা ছোট ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন পুনর্বাসন লোন প্রদান করা হয়। তবে, যদি লোনের পরিমাণ ৩ লক্ষ টাকার বেশি হয়, সেক্ষেত্রে সহজামানত বা স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রাখা প্রয়োজন হতে পারে।
আপনি যদি এই ব্যাংকগুলোর কোনোটি থেকে বিনা জামানতে লোন নিতে আগ্রহী হন, তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা তার নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করে সর্বশেষ তথ্য, সুদের হার এবং শর্তাবলী জেনে নেওয়া উচিত।

বিনা জামানতে লোন পাওয়ার যোগ্যতা

বিনা জামানতে লোন পাওয়ার যোগ্যতা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ যোগ্যতা ও শর্ত রয়েছে যা প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:
  • আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • আবেদনকারীর বয়স ২১ বছর থেকে ৬৫ বছর এর মধ্যে হতে হয়। তবে কিছু ব্যাংক এর ক্ষেত্রে বয়সসীমা ভিন্ন হতে পারে
  • স্বামী/স্ত্রী অথবা পিতা/মাতার স্বাক্ষর দিতে হবে।
  • অল্প পরিমাণে কিছু টাকা সঞ্চয় হিসাবে জমা করতে হবে।
  • বড় অঙ্কের ব্যক্তিগত লোনের জন্য এক বা একাধিক গ্যারান্টার প্রয়োজন হতে পারে।
  • আপনি যদি চাকরিজীবী হন, তবে আপনার একটি নির্দিষ্ট এবং স্থিতিশীল মাসিক আয় থাকতে হবে।
  • আপনি যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ব্যবসার একটি ভালো ইতিহাস থাকতে হবে।
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (CIB) রিপোর্টে আপনার কোনো খেলাপি লোনের রেকর্ড থাকা যাবে না।
বিনা জামানতে লোন পাওয়ার জন্য আপনার আর্থিক অবস্থা এবং ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা থাকায়, লোনের জন্য আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া উচিত।

বিনা জামানতে লোন নিতে কি কি লাগে

বিভিন্ন মাইক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠান গুলো বা এনজিও গুলো থেকে বিনা জামানতে লোন নেয়ার জন্য বেশ কিছু তথ্যের প্রয়োজন হয়। যদিও এ ধরনের লোন এর জন্য কোন ধরনের জামানত নেয়া হয় না, তবে ব্যাংক আপনার আর্থিক সক্ষমতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করার জন্য কিছু কাগজপত্র ও শর্ত পূরণ করতে বলবে। নিচে এর বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো:
  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • সদ্য তোলা ০২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি।
  • পেশাজীবী লোনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
  • বেতনভোগীর ক্ষেত্রে সর্বশেষ ৩-৬ মাসের বেতন সনদ এবং আপনার বেতন যে ব্যাংক হিসাবে জমা হয়, সেই হিসাবের সর্বশেষ ৬-১২ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে ব্যবসার আপডেটেড ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি এবং ব্যবসার সর্বশেষ ৬-১২ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত লোন আবেদন ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে।
  • বড় অঙ্কের ব্যক্তিগত ঋনেড় ক্ষেত্রে জামিনদারের পরিচয়পত্র, ছবি এবং আয়ের প্রমাণপত্র লাগে।
বিনা জামানতে লোন নেওয়ার আগে, আপনার পছন্দের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট লোনের পণ্য, সুদের হার, পরিশোধের মেয়াদ এবং অন্যান্য শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত।

বিনা জামানতে কত টাকা লোন দেয়?

বিনা জামানতে লোনের পরিমাণ বিভিন্ন ব্যাংক এবং লোনের ধরনের ওপর নির্ভর করে অনেক ভিন্ন হয়। এটি সাধারণত কয়েক হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নিচে বিভিন্ন ধরনের বিনা জামানতে লোনের সম্ভাব্য পরিমাণ উল্লেখ করা হলো:
ব্যক্তিগত লোন: সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যক্তিগত লোন জামানত ছাড়া দিয়ে থাকে। এই লোনের পরিমাণ সাধারণত ১ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ২০-৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কিছু ব্যাংকে, বিশেষ করে উচ্চ বেতনের গ্রাহকদের জন্য, এই সীমা ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্তও যেতে পারে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প লোন: ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক জামানতবিহীন বা আংশিক জামানতযুক্ত লোন দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন লোন পেতে পারেন। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এই সীমা ২৫ লক্ষ টাকা থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

ব্র্যাক ব্যাংক, এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কৃষি ব্যাংক এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এই ধরনের লোন দেয়। নিচে বিনা জামানতে বিশেষ ৩টি ব্যাংকের লোনের পরিমাণ নিচে উল্লেখ করা হলঃ
১। গ্রামীণ ব্যাংক
গ্রামীণ ব্যাংক সাধারণত জামানতবিহীনভাবে সদস্যদের প্রাথমিক পর্যায়ে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন দিয়ে থাকে। লোন পরিশোধের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে লোনের পরিমাণ ও সুযোগ বাড়তে থাকে।

গ্রামীণ ব্যাংক একটি ক্ষুদ্রলোন সংস্থা যা দরিদ্র ও ভূমিহীন ব্যক্তিদের জামানতবিহীন লোন প্রদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করে।
২। কর্মসংস্থান ব্যাংক
এই ব্যাংক বেকার ও অর্ধ-বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে জামানতবিহীন লোন দেয়। বেকার যুবক ও যুব নারীরা ২০ হাজার টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানত ছাড়াই লোন পেতে পারেন।
৩। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক
বিদেশগামী কর্মীদের জন্য সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন লোন দেওয়া হয়। বিদেশ ফেরত কর্মীদের আত্মকর্মসংস্থান বা ছোট ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন লোন প্রদান করা হয়। তবে, এই লোনে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাওয়া গেলেও, ৩ লক্ষ টাকার বেশি হলে জামানত লাগতে পারে।

বিদেশে বৈধভাবে পাঠানো রেমিটেন্সের ভিত্তিতে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন লোন নিতে পারবেন। এটি ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে। আপনি যে উদ্দেশ্যে লোন নিতে চান এবং আপনার আয় অনুযায়ী, কোন ব্যাংক কত টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে লোন দিতে পারে, তা জানতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো।

বিনা জামানতে লোনের সুদের হার

বিনা জামানতে লোনের সুদের হার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত, এই ধরনের লোনের সুদের হার জামানতযুক্ত লোনের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে, কারণ এখানে লোনগ্রহীতার লোন পরিশোধের ক্ষমতা যাচাই করার জন্য কোনো জামানত থাকে না। 

তবে, সুদের হার কত হবে তা কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন - লোনগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর, লোনের পরিমাণ, পরিশোধের সময়সীমা এবং লোনদানকারী প্রতিষ্ঠানের পলিসি।

কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেমন - সোনালী ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ইত্যাদি বিনা জামানতে লোন দিয়ে থাকে। এগুলো ব্যাংকে বিনা জামানতে লোনের সুদের হার ৯% থেকে শুরু করে ২৪% পর্যন্ত হতে পারে।

কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন - প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত অভিবাসন ঋণে সুদের হার ৯% হয়ে থাকে। অন্যদিকে, ব্যক্তিগত লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ১২.৬৪% পর্যন্ত হতে পারে। যদি আপনার ক্রেডিট স্কোর ভালো থাকে, তাহলে ব্যক্তিগত লোনের সুদের হার ৯% থেকে ১৩% এর মধ্যে হতে পারে।

বিনা জামানতে লোন নেওয়ার পূর্বে, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার, প্রসেসিং ফি, এবং অন্যান্য চার্জ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত।

বিনা জামানতে লোন নেওয়ার সুবিধা

বিনা জামানতে লোন নেওয়ার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে লোনগ্রহীতার জন্য খুবই উপকারী হতে পারে। নিচে এর প্রধান সুবিধা গুলো উল্লেখ করা হলো-

সহজ ও দ্রুত আবেদন প্রক্রিয়া: যেহেতু কোনো সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয় না, তাই জমি বা সম্পত্তির মালিকানা যাচাই, আইনগত কাগজপত্র পরীক্ষাএবং মূল্য মূল্যায়নের মতো জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়াগুলো বাদ পড়ে যায়।

জামানত প্রয়োজন হয় না: এই লোন গ্রহণ করার জন্য কোনো সম্পত্তি বা কোনো অন্য সম্পদকে জামানত হিসেবে রাখতে হয় না।

সহজ ও দ্রুত প্রক্রিয়া: বিনা জামানতে লোনের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো সাধারণত কম কাগজপত্র চায় এবং প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। যেহেতু জামানত সংক্রান্ত মূল্যায়ন বা যাচাইয়ের প্রয়োজন হয় না, তাই লোন অনুমোদন ও বিতরণ দ্রুত হয়ে থাকে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়তা: যাদের জামানত হিসেবে রাখার মতো পর্যাপ্ত সম্পত্তি নেই, তাদের জন্য বিনা জামানতে লোন একটি সহজলভ্য এবং কার্যকর বিকল্প। এটি অনেক মানুষকে তাদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে বা ছোট ব্যবসা শুরু করতে সক্ষম করে, যাদের অন্যথায় লোন পাওয়ার সুযোগ থাকত না।

কম প্রশাসনিক বোঝা: জামানত যাচাই এবং বন্ধক রাখার জন্য যে অতিরিক্ত প্রশাসনিক কাজ, আইনি খরচ এবং সময় লাগে, বিনা জামানতে লোনের ক্ষেত্রে তা থাকে না। এতে লোনগ্রহীতার সামগ্রিক চাপ এবং খরচ উভয়ই কমে আসে।

বিভিন্ন খাতে ব্যবহার: এই লোন কোনো নির্দিষ্ট খাতে ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা নেই। ব্যক্তিগত প্রয়োজন যেমন চিকিৎসা, শিক্ষা, বিবাহ বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অর্থ ব্যবহার করা যায়।

লেখকের শেষ মতামত

"বিনা জামানত" মানে সাধারণত কোনো সম্পত্তি বন্ধক রাখা হয় না। তবে, এর বিনিময়ে ব্যাংক গ্যারান্টার, পোস্ট-ডেটেড চেক, ব্যক্তিগত অঙ্গীকারপত্র, অথবা পণ্যের দায়বদ্ধতার সুরক্ষা চাইতে পারে।

বিনা জামানতে লোনের জন্য আবেদন করার আগে, আপনার পছন্দের ব্যাংকগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে তাদের নির্দিষ্ট লোন, সুদের হার, শর্তাবলী, এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আড্ডাভিউ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url