আরবি সফর মাসের ফজিলত- সফর মাসের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
আরবি প্রতিটি মাসই ফজিলতপূর্ণ এবং একই আমল করতে হলেও কাল-সময় ভেদে আমল কিছুটা আলাদা হয়। সফর মাসের আমাদের কি ধরনের আমল করা উচিত এবং এই আমল করলে কি কি ফজিলত রয়েছে সে বিষয়ে আমরা আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্ঠা করব ইনশাআল্লাহ।
পেজ সূচিপত্রঃ আরবি সফর মাসের ফজিলত
সফর মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ
সফর মাসে ইসলামিক ঘটনাবলি
সফর মাসে যা যা বর্জনীয়
আখেরি চাহার শোম্বা
সফর মাসের ধারণা
আরবি হিজরি সনের দ্বিতীয় মাস হলো সফর (صفر) । আরবি মহরম মাসের পরেই সফর মাস আসে। সফর (صفر) আরবি শব্দ যার অর্থ খালি বা শূণ্য। তবে সফর শব্দের অভিধানিক অর্থ ভ্রমন করা বা যাত্রা করা। জাহেলি যুগে মহরম মাসকে পবিত্র মাস হিসাবে বিবেচনা করায় মহরম মাসে যুদ্ধ বন্ধ থাকায় এই মাসে বেশি বেশি লোক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উদ্ব্যেগ প্রকাশ করে।
আরবের জাহেলি যুগের লোকজন অর্থাৎ প্রাচীন কালে সফর মাসে দলে দলে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তাদের ঘর বাড়ি শূণ্য হয়ে পড়ে বা ফাকা হয়ে যায়। যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বাড়ি-ঘর এমনকি গ্রাম পর্যন্ত ফাঁকা হয়ে যায়। এজন্য এই মাসের নাম সফর রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন👉 ঃ সালাতুল হাজত এর নিয়ম ও ফজিলত
সফর মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ
- বছরের প্রতি মাসেই সাধারণত তিনটি করে রোজা রাখা যায়। এই মাসে আমরা এই তিনটি রোজা রাখতে পারি। মাসের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখ এই তিনটি রোজা রাখা উত্তম। এই তিনটি রোজা রাখাকে আইয়ামে বীজ বলা হয়। আইয়ামে বীজ রোজা রাখা মোস্তাহাব। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেন, “ প্রতি মাসে তিনটি সিয়াম পালন করা সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান।”
- সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্প্রতিবার সিয়াম পালনের অভ্যাস করা ভালো। সোমবার ও বৃহস্প্রতিবার বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমাদের মহানবী (সঃ) সপ্তাহে এই দুই দিন নিজে রোজা রাখতেন। আমরা এই মাসে আমল হিসাবে সপ্তাহে এই দুই দিন রোজা রাখতে পারি। নবী করিম হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেন, “ সোমবার ও বৃহস্প্রতিবার আল্লাহর সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি।”
- দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ করা হয়েছে। ফরজ নামাজ পরবর্তীতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ও গুনাহ থেকে ফিরে আসার জন্য ইস্তিগফার ও তাওবা বেশি বেশি করে পড়া উত্তম। বিশষ করে ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি ও সাইয়েদুল ইস্তিগফার সকাল-বিকেল পড়া যেতে পারে। সাইয়েদুল ইস্তিগফারের ফজিলত অনেক, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত হলো যে ব্যাক্তি সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠ সে যদি ঐদিন মারা যায় তাহলে সে জান্নাতি।
- প্রতিদিন ফজর ও মাগরিব নামজ পরবর্তিতে সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের অনেকগুলো ফজিলতের মধ্যে অন্যতম হলো যদি সকালে ফজরের নামাজ পরবর্তিতে পাঠ করলে সারা দিন ৭০ হাজার ফেরেশতারা আপনার জন্য দোয়া করতে থাকেন, আর সন্ধ্যায় পাঠ করলে সারা রাত ৭০ হাজার ফেরেশতারা আপনার জন্য দোয়া করতে থাকেন।
- কুরআন মাজিদ তিলওয়াত করা নিত্য দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। সফর মাসে বিশেষ কোন আমল না থাকায় আমরা এই মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলওয়াত করতে পারি। কোরআন পাঠ করলে রুহুর প্রশান্তি আসে এবং আল্লাহ তায়ালার রহমত বেশি বেশি পাওয়া যায়।
- সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো শুক্রবার অর্থাৎ জুম্মার দিন। জুম্মার দিনে সূরা কাহাফ বেশি বেশি পাঠ করা যেতে পারে। এই আমল করলে সম্পূর্ণ বা পুরো সপ্তাহ জুড়ে এক আলো বা নূর জ্বলতে থাকবে।
সফর মাসে ইসলামিক ঘটনাবলি
মহান আল্লাহ তায়ালা যখন থেকে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকে আল্লাহ তায়ালা ১২টি মাস নির্ধারন করেছেন। পৃথিবীর সৃষ্টি লগ্ন থেকেই সফর মাসের কিছু ঘটনা রয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী জানা যায়, সফর মাসেই আমাদের প্রথম নবি আদম(আ) তার ভূলের প্রায়াশ্চিত্য হিসাবে জান্নাতের সুখময় জায়গা হতে পৃথিবীতেে আগমন করেন।
আমরা জানি নূহ(আ) এর কওমের উপর মহা প্লাবন তথা তুফান ঘটে। নূহ(আ) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে নৌকা তৈরি করেন এবং দীর্ঘ সময় পরবর্তী যখন নূহ (আ) কওম আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অমান্য করতে থাকে, বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত থাকে তখন আল্লাহ এক মহা প্লাবন সৃষ্টি হয়। সে সময় যাহারা নূহ(আ) কথা মত আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলতো শুধু তারাই নৌকায় উঠতে পারে আর কওম তুফানে প্লাবিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। এই তুফান তথা মহা প্লাবন এই সফর মাসেই ঘটে।
fsxdsdfg 02 আরও পড়ুন👉 ঃ সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন (আপডেট তথ্য) - যোগ্যতা ও কাগজপত্র
আমাদের জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ) ঈমানের এক কঠিন পরীক্ষা দিয়েছেন। নমরুদ নিজেকে আল্লাহ তথা খোদা দাবি করে, কিন্তু ইব্রাহিম(আ) আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়ায় নমরুদ ইব্রাহিম (আ) কে ধ্বংস তথা আল্লাহর বিধানকে ধ্বংস করার জন্য আগুনে নিক্ষোপ করেন। সৌভাগ্যের বিষয় মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আগুন ইব্রাহিম (আ) এর জন্য আরাম দায়ক হয়ে যায়। ইব্রাহিম (আ) কে আগুনে নিক্ষেপ করার ঘটনাটিও এই সফর মাসেই ঘটে।
আমাদের সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (স) শেষ জীবনের দিকে এই সফর মাসের শেষের দিকে প্রথম অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘ ১৩ থেকে ১৪ দিন হযরত মুহাম্মদ (স) অসুস্থ থেকে রবিউল মাসের ১২ তারিখে আল্লাহর দিদারকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এছাড়াও ইউসুফ(আ) কে তাঁর ভাইয়েরা মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে কূপে ফেলে দেওয়ার ঘটনা, ইউনুস (আ) কে বিশাল সামুদ্রিক মাছ খেয়ে ফেলার ঘটনা, আইয়ুব(আ) এর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সমূহ এই সফর মাসেই ঘটে।
সফর মাসে যা যা বর্জনীয়
সফর মাসে বিশেষ কোন আমল না থাকলেও এই মাস নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার রয়েছে। অনেকেই ধারনা করে এই মাসে বিভিন্ন অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটায় এই মাস অশুভ। এই মাসে সম্পর্কে অশুভ মনে করা একদম উচিৎ নয়। আল্লাহর প্রদত্ত প্রতিটি দিনই রহমতপূর্ণ, বরকতময়।
জাহেলি যুগে সফর মাসে কোন বণিক বড় ধরনের বাণিজ্যে যেতে না। কারণ এই মাসে ব্যাবসায়িক লেনদেন শুভ হয় না। সফর মাসে ব্যবস্যা শুরু করলে, সফর মাসে বাণিজ্য করলে লাভ হতো না বরং লস বা লোকসান হতো। এটি একটি কুসংস্কার ধারণা, এই ধরনের কুসংস্কার ধারণা বর্জন করা উচিৎ। আমাদের নবি হযরত মুহাম্মদ (স) বলেন, “ সফর মাসে কোন অশুভ নেই।”
বর্তমানে অনেকেই এই মাসেকে অশুভ মনে করেন। এই মাসে বিয়ে করা অশুভ বলে মনে করায় অনেকেই বিয়ে করে না এই মাসে। এই মাসে বিপদকে এড়ানোর জন্য, কু-লক্ষণ তাড়ানোর জন্য অনেকেই তাবিজ ব্যবহার করে। এমন ভাবনা ভাবা এক ধরনের শিরক। এসব থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
আখেরি চাহার সোম্বা
আমার তোমার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) সফর মাসে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার জন্য শরীর এতটা দুর্বল হয়ে পড়ে যে তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। এমন কি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়াতে পারেন না, বিধায় আবু বক্কর (র) এর ইমামতিতে নামাজ পড়া শুরু হয়।
এই অবস্থায় সকলেই ধরে নেন রাসুল(স) এর ইমামতে আর নামাজ পড়ার সৌভাগ্য আর আমাদের হবে না। সবাই নামাজ পড়ে আল্লাহর কান্না করে আল্লাহর রাসুলের সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। অনেকে নামাজের মধ্যেই কান্নাকাটি করত। এমত অবস্থায় সফর মাসের শেষ বুধবার হঠাৎ রাসুল(স) কিছুটা সুস্থতা বোধ করেন।
আরও পড়ুন ঃ ১০ হাজার টাকায় ২৫টি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানুন।
শেষ কথা
সফর মাসে বিশেষ কোন আমল না থাকলেও এই মাসে আল্লাহর রহমত আসবে না এমন কথা সঠিক নয়। বরং প্রতিটি দিনই আমাদের জন্য রহমতপূর্ণ ও বরকতময়। এই মাসকে নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক শিরক বিদ্যমান, সেই শিরক থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিৎ। আল্লাহ আমাদের সকেলকে শিরক থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করেন। আমিন।
আড্ডাভিউ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url